বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১১

খরমপুরের ওরশ-পীর, ফকিরের আগমণে মুখরিত আখাউড়া

চৈতৈন্য দাস সহ অন্য জেলেরা প্রতিদিনের মত ওইদিনও জাল নিয়ে তিতাস নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিল। কিন' সেদিন ঘটল আশ্চর্য্য ঘটনা। মাছের বদলে জালে ওঠে এল শরীর বিহীন শির। আরো আশ্চর্য্যের ঘটনা হল সেই শির কথা বলতে পারত। জালে ওঠার পরপরই শুরু করেছিল কালেমা পড়া। আশ্চর্য্য সেই শিরের কথামত কালেমা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সেই শিরকে সমাধিস' করল জেলেরা। স'ানীয়দের ধারণা মতে, ঘটনাটি প্রায় হাজার বছর আগের। আখাউড়ার খড়মপুরের ওই স'ানটি এখন শাহ সৈয়দ আহাম্মদ গেছুদারাজ প্রকাশ কল্লা শহীদ (রাঃ) এর মাজার।
এলাকায় প্রচলিত আছে, গেছুদারাজের জন্ম ইয়েমেনে। তিনি ছিলেন লম্বা চুলের অধিকারী ( গেছুদারাজ শব্দের অর্থ লম্বা চুলওয়ালা) হযরত শাহজালালের নেতৃত্বে আরব থেকে আড়াইশ আউলিয়া ধর্ম প্রচারের জন্য ভারত বর্ষে এসেছিলেন। হযরত শাহজালালের ভাগিনা গেছুদারাজও ছিলেন সেই দলে। তৎকালীন শ্রী হট্টের অত্যচারী রাজা আচক নারায়নের কারণে অতিষ্ঠ ছিল সেখানকার মানুষ। আউলিয়াদের ওই দলটি রাজা আচক নারায়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সেই যুদ্ধে জয়ী হন আউলিয়ারা। কিন' আচক নারায়নের সেনাপ্রধান নীল কমলের তরবারির আঘাতে গেছুদারাজের শিরচ্ছেদ হয়। আর সেই শির গিয়ে পড়ে কুশিয়ারা নদীতে। যা ভাসতে ভাসতে তিতাসের মোহনায় এসে জেলেদের জালে ওঠে।
প্রতিবছরের মত এ বছরও খরমপুরের শাহ সৈয়দ আহাম্মদ গেছুদারাজের মাজারে ১০ আগষ্ট থেকে ৭ দিনব্যাপী ওরশে লাখো ভক্তের সমাগম ঘটেছে। ১৪ আগষ্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ মোনাজাত। তাছাড়া ওরশকে কেন্দ্র করে মেলা চলে মাস অবধি। ওরশ উপলক্ষে বিভিন্ন শিল্পীরা কেল্লা শহীদকে নিয়ে বের করেন গানের এ্যালবাম। এ বছর শিল্পী হাবিব উদ্দিনের অন-রে কাটা কেল্লা, জালাল উদ্দিনের কেল্লা বাবা মেহেরবান, পীরজাদা জাহাঙ্গীর হোসেন চিশতীর কেল্লা আমার জান, শরীফ উদ্দিনের পার কর কেল্লা, মিন্টু সরকারের কাটা কেল্লা খেলছে খেলা নিয়ে ৫টি গানের এ্যালবাম বের হয়েছে। বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। খড়মপুরের ওরশকে কেন্দ্র করে এ্যালবাম বের করা অনেক শিল্পীরাই আজ বিভিন্ন স-রে প্রতিষ্ঠিত। শরীফ উদ্দিন, মুন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ওরশ উপলক্ষে মাজারের বিভিন্নস'ানে বসেছে ভক্তদের সঙ্গীতের আসর। পীর, ফকিরের আগমণে মুখরিত গোটা আখাউড়া। আর মৃত্যুকূপ মোটরসাইকেল, যাদু প্রদর্শনী, নাগরদোলাসহ নানা আয়োজনে পরিপূর্ণ মেলায় মেতেছে সব বয়সের মানুষ।
মাজার কমিটির সদস্য সালেহ নেওয়াজ খান খাদেম বলেন, মাজার এলাকায় একটি পুরোনো মসজিদে প্রতিষ্ঠা সাল লেখা রয়েছে ৩২৩ ত্রিপুরা। ধারণা করা হচ্ছে মাজার হওয়ার পর এ মসজিদটি স'াপন করা হয়।
মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম খান খাদেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে  বলেন, প্রতি বছরের মত এ বছরও ওরশ উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস'া নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৪’শতাধিক পুলিশ সদস্য ছাড়াও র‌্যাব, বিজিবি কর্মরত থাকে। এ বছর ৪টি সিসি ক্যামেরাও কার্য্যকর ছিল।
০১৯১৬-৯৯০৪১৫
১৭ আগষ্ট, ২০১১।

রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১১

রেলওয়ের সেবা সপ্তাহের নমুনা


                                                  সমীর চক্রবর্তী

‌‌এইটা কি শেখ শাদী’র আমলের ঘটনা? সংবাদপত্র অফিসে খবরটা পাঠানোর পর এভাবেই সেখান থেকে জানতে চাওয়া হলো আমার কাছে। ঘটনাটা আজকের জেনেও এভাবেই বলার কারণ ফোনদাতা নিজেও বিক্ষুব্দ। রেলওয়ে ধবংস হয়ে গেছে এমন কথা শুনা যায় প্রায়ই। লোকবল সংকট, দূর্নীতি ইত্যাদির কারণেই এমন অপবাদ। এসবের মাঝেও রেলওয়ে সেবা সপ্তাহর পালন করা হয়। এবার এই সেবা সপ্তাহ শুর" হয়েছে রবিবার থেকে । কিন' প্রথম দিনই যে সেবা পেলেন যাত্রিরা! তাতে ওই সাংবাদিকের মত হতাশ ও বিক্ষুব্দ হয়েছেন বহু মানুষ। প্রথম দিনেই (রবিবার) তা"িছল্য সইতে হয়েছে অর্ধশতাধিক যাত্রীকে। পড়নে লুঙ্গি আর অপরিচ"ছন্ন জামা কাপড়ের কারনে প্রথমে ভৈরব স্টেশনে বগির ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি তাদের। ফলে বাধ্য হয়েই ট্রেনের ছাদে উঠন তারা। কিন' আখাউড়া স্টেশনে আসলে লাঠিপেটা করে ছাদ থেকে তাদের নামিয়ে দেয় পুলিশ। ফলে ট্রেনে ওঠতে না পেরে বিপাকে পড়েন তারা। সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনের এ ঘটনায় বিক্ষুব্দ যাত্রীরা এ বিষয়ে আখাউড়া জংশন স্টেশন সুপারিনটেনডেন্টের কাছে অভিযোগ করেও ফল পাননি।

আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন যাত্রী মোঃ আছর আলী, জুয়েল মিয়া,স্বপন মিয়া, জুলহাজ, মোফজ্জলসহ অন্যান্যদের সাথে কথা বলে যা জানা গেল তা এক কথায় ভয়ঙ্কর। জানালেন, তাদের সবাই শ্রমিক। ফেনীর পরশুরামে আজ (রবিবার) দুপুরে শ্রমিকের হাট বসবে। তাই ময়মনসিংহের গৌরিপুর ও দূর্গাপুর উপজেলার কয়েক’শ শ্রমিক সড়ক পথে ভৈরব আসেন। ফেনী যাওয়ার জন্য ভৈরব জংশন থেকে টিকেট কেটে ট্রেনে ওঠতে যায়। কিন' সেখানে বাঁধ সাধেন ট্রেনে দায়িত্বরতরা।(রেলওয়ে পুলিশ, টিটিই, এ্যাটেনডেন্ট)। তাদের তা"িছল্যের কারনে বগির ভেতর প্রবেশ করতে পারেনি বেশিরভাগ শ্রমিক। ফলে বাধ্য হয়েই প্রায় শতাধিক শ্রমিক ছাদে ওঠে। কিন' ট্রেনটি আখাউড়া জংশন স্টেশনে এসে পৌঁছলে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে লাঠিপেটা করে ট্রেনের ছাদ থেকে নামিয়ে দেয়। ছাদে ওঠার অপরাধে কয়েকজনকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। এরই মাঝে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক আর ট্রেনে ওঠতে পারেনি।

ভোগানি-তে পড়া শ্রমিক অলি মিয়া (৬৫) জানান, স্ত্রী অসুস'। ঘরে বিয়ের উপযুক্ত দুই মেয়ে। তাই বাধ্য হয়েই কাজে যা"িছলেন। কিন' মাঝপথে নামিয়ে দেওয়ায় বাড়ি কিংবা পরশুরাম কোথাও যাওয়ার মত টাকা নেই তার কাছে। শুধুমাত্র লুঙ্গিপড়া শ্রমিক বলেই তাদেরকে বগির ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

আছর আলী নমে আরেক শ্রমিক বলেন,“ শ্রমিক হাট ধরতে পারলে টাকা বেশি পাওয়া যায়। আবার শ্রমিক হাট ধরতে হলে তাদের সাত দিন অপেক্ষা করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,পড়নের কাপড় ভালো না থাকলে টিকিটের কি দাম?”

ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকরা অপরাধ। তাছাড়া রেলওয়ের সেবা ও পরিছন্নতা সপ্তাহ চলছে। তাই তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন বক্তব্য দেওয়ার পরও আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের সুপারিনটেনডেন্ট খায়রল বাশার তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, টিকিট থাকায় বিকেলের কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে ওঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস'া করার।

২৪ জুলাই, ২০১১১।

শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১১

৬৫তম জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি : জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন

­মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য, স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখনের ৬৫তম জন্মদিন আজ শুক্রবার পহেলা জুলাই। ১৯৪৭ সালের এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুনিয়াউটে জন্ম নিয়েছিলেন এই জাতীয় বীর ।

১৯৬৬-৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৬৮-৬৯ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ছয়দফা আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের একট্টা করেতে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। ছাত্রনেতা হিসেবে ’৬৯ এর গণঅভূত্থানে আব্দুল কুদ্দুস মাখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি সর্বপ্রথম ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরই মাঝে তিনি সাংবাদিকতায়ও জড়িয়ে পড়েছিলেন। স্কুল জীবন থেকেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে। সেখানে অল্প কয়েক দিনে ছাত্র নেতা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের চেতনায় ছাত্রসমাজকে ছাত্রলীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধকে সুসংগঠিত করতে আব্দুল কুদ্দুস মাখনের ছিল অসামান্য অবদান। ১৯৭১ সালে গঠিত স্বাধীনবাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতার একজন ছিলেন তিনি। ওই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে সর্বপ্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। ৩ মার্চ ছাত্র পরিষদের এক জনসভায় স্বাধীনতার প্রথম ইস্তেহার পাঠ করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ও বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক ঘোষণা দেওয়া হয় ওই ইস্তেহারে। ২৩ মাচং বঙ্গবন্ধুর হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন আব্দুল কুদ্দুস মাখন।

স্বাধীনতা যুদ্ধেও আব্দুল কুদ্দুস মাখনের ছিল অসামান্য অবদান। তিনি ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় লিবারেশন কাউন্সিলের ছাত্র বিষয়ক প্রতিনিধি। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুমেন্ট, ট্রেনিং ও অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব ছিলো তাঁর কাছে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার কাজে কলকাতায় অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী মেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নবীনগর নির্বাচনী এলাকা থেকে। ওই সালেই তিনি ছাত্রলীগ,ছাত্র ইউনিয়ন ও যবলীগের সমন্বয়ে গঠিত দলের সদস্য হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন। তিনি আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যও ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক ও তাঁর পরিবারকে হত্যার পর যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছিল তাতে গা ভাসাননি আব্দুল কু্‌ধসঢ়;দ্দুস মাখন। ২৩ আগস্ট রাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। সাজাও হয়েছিল সামরিক আইনে। ১৯৭৮ সালের ১২ নভেম্বর তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। এরপর তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা করেন। মৃত্যুর আগ তিনি আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। আজবীন সংগ্রামী এই নেতা ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তার পিতা মোহাম্মদ আবদুল আলী। মাতা আমেনা খাতুন। সাত ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ক্ষনজন্মা এই মানুষটি ১৯৯৮ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।